Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার সমস্যা ও উন্নয়ন সম্ভাবনা

উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার সমস্যা ও উন্নয়ন সম্ভাবনা
কৃষিবিদ বিধান কুমার ভান্ডার

অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও ৫ ডিসেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২১’ উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। এবারের বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘লবণাক্ততা রোধ করি, মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করি।’ বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততা সমস্যা প্রকটভাবে বিদ্যমান। বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য মাটির লবণাক্ততা সমস্যার বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করবে-এ প্রত্যয় নিয়ে দিনটি পালিত হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যকর মাটির গুরুত্বের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা এবং মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার প্রতি বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষক, কৃষক সবাইকে সচেতন করা বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উদ্যাপনের মূল লক্ষ্য।


বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী নদীবাহিত পললভূমি বেষ্টিত ১,৪৭,৬১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট এ দেশ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুজলা-সুফলা সোনার বাংলাদেশ। এ দেশে ১৫টি ভূপ্রকৃতি ও ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল রয়েছে। ৪১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার আয়তন ২৮,৬০০ বর্গকিলোমিটার, যা দেশের প্রায় ২০ ভাগ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার দৈর্ঘ্য বেড়ে ৭১০ কিলোমিটার হয়েছে, যা দেশের প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি। দক্ষিণাঞ্চলে গঙ্গা পললভূমি, গঙ্গার জোয়ার-ভাটা পললভূমি, মেঘনা মোহনা পললভূমি, চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলবর্তী জোয়ার ভাটা পললভূমি ও পিট বেসিন নামক ৫টি ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চল রয়েছে। এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে প্রধানত স্থানীয় উন্নত জাতের ধানের আবাদ করা হয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ জমি মৌসুমি পতিত থাকে; কারণ শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়। তখন সেচের জন্য উপযোগী পানির অভাব দেখা দেয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ইকোসিস্টেমের এবং কৃষি পরিবেশের উপর ঋণাত্মক প্রভাব দেখা যায়। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা কার্বন নির্গমনের ফলে ওজন স্তর হালকা হওয়া, পরিবেশগত ক্ষতি ও হুমকি দ্বারা বিপন্ন অঞ্চল। ধারণা করা হচ্ছে, আবহাওয়ার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে পৃথিবীর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি (শস্য), মৎস্য ও জনবসতি সর্বাধিক হুমকির সম্মুখীন; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা অত্যন্ত সফলভাবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের আবাদি জমির শতকরা ১০ ভাগের বেশি দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায়। এ দেশের উপকূলবর্তী এলাকার ২৮.৬০ লাখ হেক্টরের মধ্যে ১০.৫৬ লাখ হেক্টর আবাদি জমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা দ্বারা আক্রান্ত। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ১৯৭৩ সাল থেকেই উপকূলীয় এলাকার পানি ও মৃত্তিকার লবণাক্ততা পরিবীক্ষণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পরিচালনা করে আসছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলার অধিকাংশ জমি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। ১৯৭৩ সালে উপকূলীয় এলাকার ৮ লক্ষ ৩৩ হাজার হেক্টর, ২০০০ সালে ১০ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর এবং ২০০৯ সালে ১০ লক্ষ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে লবণাক্ততা লক্ষ করা যায়। জমিতে লবণাক্ততার কারণে এ এলাকায় বর্ষাকালে শুধু আমন ধানের উৎপাদন ছাড়া সারা বছর পতিত থাকে, কারণ এলাকায় জমিতে জো আসে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে। শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি পানির অভাবের কারণে বোরো ধান আবাদ করা সম্ভব হয় না।


লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেতে পারে বিভিন্ন কারণে। বাংলাদেশে বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায় দু’টি প্রাকৃতিক কারণে। এক- জোয়ারের সময় লবণযুক্ত পানি জমিতে প্লাবিত হয়ে; দুই- ভূগর্ভস্থ লবণাক্ত পানি কৈশিক রন্ধ্র দিয়ে মাটির উপরে চলে আসা। সাধারণত শুকনো মৌসুমে (মার্চ-মে) লবণাক্ত জোয়ারের পানিতে বহু জমি তলিয়ে যায়। তখন লবণাক্ত পানি জমিতে ছড়িয়ে যায়। এ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা হলে মাটি বা জমি লবণাক্ত হয়। অন্যদিকে বর্ষা শেষ হলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস হতে মাটি শুকাতে শুরু করে। এর ফলে মাটিতে অনেক ফাটল সৃষ্টি হয়। যখন মাটির উপরে রোদ পড়ে তখন মাটির উপরিস্তর হতে পানি বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে চলে যায় এবং ভূগর্ভস্থ লবণাক্ত পানি ঐ ফাটল দিয়ে ভূমির উপরিস্তরে চলে আসে। তখন জমির উপরিস্তর লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া মনুষ্য সৃষ্ট কারণেও লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। যেমন, উপকূলীয় অনেক এলাকায় মৎস্য চাষিরা লবণ পানির ঘের তৈরি করে চিংড়ি চাষ করে। এতে করে ঐসব ঘেরের মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়।


গবেষণায় দেখা গেছে যে, লবণাক্ততার কারণে উদ্ভিদের বৃদ্ধি কমে যায়, ফুলের সংখ্যা হ্রাস পায়, অনেক ক্ষেত্রে পরাগায়নও হয় না। ফলে ফসলের ফলন বিভিন্ন মাত্রায় কমে যায়। মাটি লবণাক্ত হওয়ার কারণে মৃত্তিকা দ্রবণের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। তখন অল্প ঘনত্বের গাছের রস চলে যায় মাটিতে। ফলে গাছ পানিশূন্য হয়ে নেতিয়ে পড়ে। লবণাক্ত জমিতে দ্রবীভূত লবণের মাত্রা বা পরিমাণ বেশি থাকায় গাছ মাটি থেকে খাদ্য উপাদান ও পানি কোনটিই সহজে শোষণ করতে পারে না। প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয় শোষিত উপাদানসমূহের আত্তীকরণেও।


এইসব প্রতিকূলতা ছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় আরও অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক বেশি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়ে থাকে।  দুর্বল পোল্ডার ও স্লুইস গেট যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে সময়ে-অসময়ে লবণাক্ত পানি ফসলি জমিতে প্রবেশ করে। এতে অনেক ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লবণ সহিষ্ণু ফসল ও জাতের অপ্রতুলতার কারণে কৃষকেরা অধিক লবণাক্ততার সময়ে ফসল চাষ করতে পারে না। লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনার জন্য কারিগরি জ্ঞানের ও প্রশিক্ষণের অপ্রতুলতার কারণে কৃষকেরা অধিক লবণাক্ততার সময়ে ফসল চাষ করতে পারে না। উপকূলীয় দক্ষিণ এলাকায় শীতকাল ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় লবণাক্ততা সহিষ্ণু গমের মতো সম্ভাবনাময় ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। উপকূলীয় অনেক এলাকার স্থানীয় রাস্তা নদীর পাড়ের বেড়ি বাঁধের উপর থাকার কারণে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিপণনে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই এলাকায় অনেক খাল প্রভাবশালী মহল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে। ফলে শুকনো মৌসুমে (খরিপ ১) কৃষকরা সেই সকল খালের পানি ফসল চাষে ব্যবহার করতে পারে না। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রভাবশালীরা ফসলি জমিতে লবণ পানির ঘের তৈরি করে মাছ চাষ করছে। এতে করে এসব এলাকায় ফসল চাষ সম্ভব হচ্ছে না এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।


লবণাক্ত এলাকার কৃষিতে বিপ্লব আনয়ন সম্ভব। লবণ সহিষ্ণু ফসল ও জাতের উদ্ভাবন এবং আধুনিক চাষ প্রযুক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। ভুট্টা একটি লবণসহিষ্ণু ফসল। তাই, কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে স্থানীয় জাতের ধানের পরিবর্তে স্বল্প মেয়াদি আধুনিক জাতের বা হাইব্রিড জাতের ভুট্টা আবাদ করা যেতে পারে। এতে করে আমন ধান কাটার পর জমি ভুট্টা চাষের জন্য ব্যবহার করা যাবে। যেহেতু উপকূলীয় এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি লবণাক্ত থাকে, তাই বর্ষাকালে খালে মিষ্টি পানি জমিয়ে রেখে ভুট্টা চাষ করা যেতে পারে। যেহেতু এই এলাকার খালগুলো ভরাট হওয়ায় পানি ধরে রাখা যায় না, তাই খালগুলো খননের মাধ্যমে পানি ধরে রাখতে পারলে শুকনো মৌসুমে ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। লবণাক্ত এলাকায় ‘খামার পুকুর প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে ফসল চাষ সম্ভব হবে। কারণ এই প্রযুক্তিতে মাটির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। এতে আগাম ‘জো’ আসে এবং মিষ্টি পানির জোগান সম্ভব হয়। কলস সেচ প্রযুক্তি, ডিবলিং পদ্ধতি, দ্বিস্তর মালচিং প্রযুক্তি, টপ সয়েল কার্পেটিং/মালচিং, রিজ-ফারো পদ্ধতি, লবণাক্ততা সহনশীল জাত স্ক্রিনিং, ফ্লাইং বেড এগ্রিকালচার, জিরো টিলেজ ও বপনের সময় পরিবর্তন পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করলে মাটি ও পানির লবণাক্ততা কমিয়ে ফসল চাষ সম্ভব হবে। যেসব জমিতে দেরিতে ‘জো’ আসে সেসব জমিতে পলিব্যাগ/ট্রে-তে উৎপাদিত চারা রোপণ করে খরিপ-১ মৌসুমে আগাম তরমুজ চাষ করা সম্ভব। এই লবণাক্ত এলাকায় লবণাক্ত সহনশীল ফসল যেমন সূর্যমুখী, রেড বিট, সয়াবিন ইত্যাদি চাষাবাদ করতে হবে। উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় প্রায় ২,৩০,০০০ মাছের ঘের রয়েছে। এর মধ্যে মিষ্টি পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ হয় এবং লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। এ ছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোট ছোট ঘেরের পাড়ে প্রায় সারা বছর সবজি ও তরমুজ চাষ করা যেতে পারে। আর বড় আকারের লিজ নেয়া ঘেরসমূহের পানি বর্ষাকালে লবণমুক্ত হয়ে যায়। তখন মাটি, সার ও পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্ষাকালে ঘেরের পাড়ে সবজি ও তরমুজ চাষ সম্ভব। উপকূলীয় এলাকার সকল খালের ইজারা প্রদান বন্ধ করে কৃষকদের জন্য পানি ব্যবহার উন্মুক্ত করে দিতে হবে। জমি সমতল রাখতে হবে এবং সব সময় ফসল দ্বারা আচ্ছাদিত রাখার চেষ্টা করতে হবে, এতে কৌশিক ছিদ্র দিয়ে লবণ কম উঠবে। পলি মাল্চ পদ্ধতিতে চাষাবাদের সম্ভাব্যতা যাচাই করা যেতে পারে।


সবশেষে বলা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের লবণাক্ত কবলিত জমির লবণাক্ততা কমাতে হলে লবণ পানির ব্যবহার কমাতে হবে। পোল্ডার ব্যবস্থাপনাসহ স্লুইসগেট ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ করতে হবে। সর্বোপরি মাটি ও পানির লবণাক্ততা বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

লেখক : মহাপরিচালক, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। ফোন : ০২৯১১৩৩৬৩, ই-মেইল : director@srdi.gov.bd

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon